বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট ব্যবহার অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কারণ দিন দিন সাইবার আক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে এবং কমার কোনো লক্ষণ নেই। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে অনেকে যথেষ্ট সতর্ক না থাকায় এবং নিরাপত্তা সম্পর্কে অবহিত না হওয়ায় এই ঝুঁকি আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের সাইবার আক্রমণের ফলে ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান উভয়ই বিপুল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
সম্প্রতি চেকপয়েন্ট সফটওয়্যার টেকনোলজি লিমিটেড একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে যা উদ্বেগের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ওই রিপোর্টে সংস্থাটি জানিয়েছে যে, গত বছরের তুলনায় ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকে ৩৩ শতাংশ সাইবার আক্রমণের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে এবং এই অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন না হলে ভবিষ্যতে এর পরিমাণ আরও বাড়বে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে, যারা খুব সাধারণ পিন বা পাসকোড ব্যবহার করে থাকেন, তারা তুলনামূলকভাবে বেশি সাইবার আক্রমণের শিকার হয়ে থাকেন। সহজ পাসওয়ার্ড ব্যবহারকারীদের তথ্য চুরি করা সহজ হয় বলে হ্যাকাররা এই সুযোগটি বেশি গ্রহণ করে। সুতরাং, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের উচিত তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা এবং জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা। এছাড়া, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে আরও বেশি তথ্য জানার প্রয়োজন রয়েছে যাতে আমরা সবাই মিলে একটি নিরাপদ ডিজিটাল পরিবেশ গড়ে তুলতে পারি।
তারা একটি সমীক্ষায় প্রায় ৩৪ লাখ পিন বা পাসওয়ার্ড পরীক্ষা করেছে। এই সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে, যারা খুব সাধারণ পিন বা দুর্বল পাসকোড ব্যবহার করেন, তাদের অ্যাকাউন্ট বা ডিভাইস সহজেই হ্যাক করা সম্ভব। দুর্বল পাসওয়ার্ড বা পিন ব্যবহারকারীদের ডিভাইস সুরক্ষার ঝুঁকিতে থাকে কারণ এই ধরনের পিন বা পাসওয়ার্ড সহজেই অনুমান করা যায়। এর ফলে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য, আর্থিক তথ্য বা অন্যান্য সংবেদনশীল তথ্য সাইবার অপরাধীদের কাছে চলে যেতে পারে।
এই কারণেই সাইবার অপরাধীরা এখন এমন ব্যক্তি, ব্যবসায়ী বা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিকে টার্গেট করছে যাদের পিন বা পাসকোড খুবই সাধারণ এবং দুর্বল। সাইবার অপরাধীরা সহজেই অনুমান করতে পারে এমন পিন বা পাসকোড ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্টে অনুপ্রবেশ করে তাদের তথ্য চুরি করতে পারে। এই ধরনের অপরাধের ফলে ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। তাই, সাইবার নিরাপত্তার জন্য শক্তিশালী এবং অনন্য পাসকোড ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি।
নিচে সেই সকল পিন (PIN) বা পাসকোডগুলির একটি তালিকা দেওয়া হল, যেগুলি ব্যবহার করলে সহজেই সাইবার অপরাধীরা আপনার ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ পেতে পারে। এই পাসকোডগুলির মধ্যে রয়েছে: ১২৩৪, ১১১১, ০০০০, ১২৩৪৫৬ ইত্যাদি। এই পিন বা পাসকোডগুলি খুবই সাধারণ এবং সহজেই অনুমানযোগ্য, যা সাইবার অপরাধীদের কাছে একটি সুযোগ করে দেয়। তাই আপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শক্তিশালী এবং জটিল পাসকোড ব্যবহার করুন এবং নিয়মিত তা পরিবর্তন করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
কোন কোন পিন (PIN) সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়?
- ১২৩৪
- ১১১১
- ০০০০
- ১২১২
- ৭৭৭৭
- ১০০৪
- ৪৪৪৪
- ২২২২
- ২০০০
- ৬৯৬৯
আপনি যদি এই ধরনের সহজ পিন ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে আপনি সহজেই সাইবার অপরাধীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারেন। কারণ, এই ধরনের পিনগুলি সাধারণত খুব সহজে অনুমান করা যায় এবং হ্যাক করতে খুব একটা কষ্ট হয় না। সাইবার অপরাধীরা সাধারণত এই ধরনের সহজ পিনগুলির দিকে নজর দেয় কারণ এগুলি ভাঙ্গতে তাদের বিশেষ কোনো কৌশল প্রয়োগ করতে হয় না।
এছাড়া, সহজ পিন হ্যাক করতে সময় ও প্রচেষ্টা খুব কম লাগে। অপরাধীরা সাধারণত বিশেষ ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করে এই ধরনের পিন খুব দ্রুত ভেঙে ফেলতে পারে। তাদের জন্য এটি অনেকটাই সহজ হয়ে যায় কারণ সহজ পিনের মধ্যে সাধারণত কোনো জটিলতা থাকে না, যা হ্যাকিং প্রক্রিয়াকে সহজ করে তোলে। ফলে, সহজ পিন ব্যবহারকারীরা সহজেই বিপদের সম্মুখীন হতে পারেন।
তাই, আপনার পিন নিরাপত্তার জন্য সবসময় জটিল এবং কঠিন পিন ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। জটিল পিন ব্যবহার করলে সাইবার অপরাধীদের জন্য এটি ভাঙা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়ায় এবং এতে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত থাকে। সাইবার অপরাধীদের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য আপনার পিন নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিশেষ মনোযোগ দিন এবং এমন পিন ব্যবহার করুন যা সহজে অনুমান করা যায় না।
কোন ধরনের পিন (PIN) ব্যবহার করা উচিৎ?
- ৮৫৫৭
- ৮৪৩৪
- ৯৫৩৯
- ৭০৬৩
- ৬৮২৭
- ০৮৫৯
- ৬৭৯৩
- ০৭৩৮
- ৬৮৩৫
- ৮০৯৩
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পিন (PIN) বা পাসকোড তৈরি করার সময় বিভিন্ন সংখ্যা ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন সংখ্যা ব্যবহারের ফলে এটি হ্যাক করা অনেক বেশি কঠিন হয়ে যায়। যখন আপনি একটি পাসকোড তৈরি করেন, তখন যদি একাধিক সংখ্যা ও অক্ষরের সংমিশ্রণ ব্যবহার করেন, তবে এটি অন্য কারো পক্ষে অনুমান করা কঠিন হয়ে ওঠে।
এমনকি পাসকোড নির্বাচনের সময় এমন নম্বর ব্যবহার করা উচিত যা ব্যক্তিগত বা সহজে অনুমানযোগ্য নয়। যেমন, জন্ম তারিখ বা গাড়ির নম্বরের মতো নম্বর কখনোই পাসকোড হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। এ ধরনের নম্বরগুলো সাধারণত হ্যাকারদের কাছে সহজে প্রাপ্য এবং অনুমানযোগ্য হয়ে থাকে, যা আপনার নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে পারে।
অতএব, আপনার পাসকোড বা পিনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য, আপনি এমন সংখ্যা বা অক্ষর নির্বাচন করুন যা অন্যদের পক্ষে অনুমান করা কঠিন হবে। এটি আপনার ব্যক্তিগত এবং আর্থিক তথ্যকে সুরক্ষিত রাখবে। সবসময় মনে রাখবেন, আপনার ডিজিটাল নিরাপত্তা রক্ষার জন্য একটি শক্তিশালী এবং সুরক্ষিত পাসকোড অপরিহার্য।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য
[sp_easyaccordion id=”6313″]
উপসংহার
সাইবার প্রতারণা একটি গুরুতর সমস্যা যা প্রতিদিন নতুন নতুন কৌশলে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফোনের পিন (PIN) বা পাসকোড নির্বাচন করার সময় অনেকেই সাধারণ ও সহজে অনুমানযোগ্য পিন ব্যবহার করে থাকেন, যা সাইবার অপরাধীদের জন্য হ্যাকিং সহজ করে তোলে। যেমন, “1234,” “0000,” বা জন্ম তারিখের মতো পিন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা উচিত। এসব পিন খুবই সহজে অনুমান করা যায় এবং আপনার ডিভাইসের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে।
সাইবার নিরাপত্তার জন্য শক্তিশালী ও জটিল পিন ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি। পিন নির্বাচন করার সময় বিভিন্ন সংখ্যা ও অক্ষরের সংমিশ্রণ ব্যবহার করা উচিত, যা অনুমান করা কঠিন হবে। এছাড়াও, নিয়মিত পিন পরিবর্তন করার অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং পিন সম্পর্কিত কোন তথ্য কাউকে শেয়ার করবেন না।
সর্বোপরি, প্রযুক্তির এই যুগে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে সতর্ক থাকা অপরিহার্য। ফোনের পিন নির্বাচন থেকে শুরু করে অন্যান্য সমস্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ও ডিভাইসকে সুরক্ষিত রাখার প্রথম ধাপ। সাইবার প্রতারণার ঝুঁকি কমাতে সবসময় সচেতন থাকুন এবং সঠিক পিন ব্যবহার করে নিজেকে নিরাপদ রাখুন।